লাল লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা- সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আপনারা এতো দিন লাল লজ্জাবতী গাছের নাম শুনেছেন। কিন্তু লাল লজ্জাবতী গাছ দেখতে কি রকম, উপকার কি,লাল লজ্জাবতী গাছ কি কাজে ব্যবহার করা হয়। যদি এই সব না জানেন তাহলে আজকের আর্টিকেল কি আপনার জন্য।
চলুন জেনেনি লাল লজ্জাবতী গাছের উপকার কি, গাছ দেখতে কেমন, লাল লজ্জাবতী গাছের শিড়র কি কাজে লাগে, লজ্জাবতীর গাছের গুনাগুন, লজ্জাবতী গাছের চাষ পদ্ধতি এবং গাছের ব্যবহার এইসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের দিকে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ লাল লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা

লাল লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা

আপনারা এতো দিন লাল লজ্জাবতী গাছের নাম শুনেছেন। কিন্তু লাল লজ্জাবতী গাছের মাধ্যমে কি কি উপকার পাওয়া যায় তা নিচে দেওয়া হলো:

হাত-পা জ্বালা নিরাময়: হাত-পা জ্বালার সঙ্গে শরীরে জ্বর থাকে।এই অসুখটা সাধারণ বর্ষা ও শরৎকালে দেখা দেয়।যদি হাত-পা জ্বালা বা শরীরে জ্বর থাকে তাহলে লজ্জাবতী গাছের মূল পাতা ১০ গ্রাম ৪ কাপ পানিতে দিয়ে ভালো করে সিদ্ধ ছেঁকে সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।

নাড়ি সরে আসা: প্রসূতি সন্তান প্রসবের সময় ধাত্রীর অসাবধানতায় নাড়ি সরে যায়।উচু জায়গায় বসতে গেলে অস্বস্তিবোধ করে।যদি এই রকম অসুবিধা মনে হয় তাহলে লজ্জাবতী গাছের পাতা ১০ গ্রাম, ১ কাপ দুধ ও ৩ কাপ পানি ভালো ভাবে সিদ্ধ করে প্রতিদিন সকাল- বিকাল করে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

আমাশয়:যদি আমাশয় হয় তাহলে দেখা যায় যে আমযুক্ত পায়খানা হয়।যদি এই রকম দেখা যায় তাহলে লজ্জাবতী গাছের পাতা ১০ গ্রাম ও ৩ কাপ পানি ভালো করে সিদ্ধ করে ছেঁকে সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।

ঘামের দুর্গন্ধ দূর: গরম কালে দেখা যায় মানুষ প্রায় ঘামে।এবং শরীর থেকে অনেক দুর্গন্ধ বেড় হয় আবার পোশাকে হলদে দাগ লাগে। যদি এই রকম দেখা দেয় তাহলে লজ্জাবতী গাছের ডাটা ও পাতার ক্বাথ তৈরী করে বগল ও শরীরে মাখতে হবে।তাহলে এই সব অসুবিধা দুর হবে।

যৌন ক্ষতে: যে কোন কারনে যৌন পথে ক্ষত হতে পারে।প্রথমিক স্তরে মাঝে মাঝে অল্প স্রাব চলতে থাকে।একটা আশটে গন্ধ বা লালচে স্রাব হয়ে থাকে এই রকম হলে ডাক্তার এর কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সমাধান করে থাকে।এই ধরনের অসুখ থেকে ক্যান্সার হয়ে যাওয়ার সম্ভব না থাকে। এ ক্ষেত্রে লজ্জাবতী গাছের ডাল-পাতা পানিতে ভালো করে সিদ্ধ করে ছেঁকে দিনে ২ বার করে খেলে এই রোগ ভালো হয়ে যায়।আবার লজ্জাবতী গাছের ক্বাথ তৈরী করে যৌন পথে ক্ষত ধুলে তাড়াতাড়ি ক্ষত সেড়ে যায়।

রমনের অতৃপ্তি : সন্তান হওয়ার পর প্রসাব দ্বারে শৈথিল্য হয়ে থাকলে সেটা অনেকেই মেরামত করে থাকে লজ্জাবতী গাছের ক্বাথ তৈরী করে। লজ্জাবতী গাছের পাতা সিদ্ধ করে তেলে ন্যাকড়া ভিজিয়ে পিছু ধারন করালে, এছাড়াও অন্ডকোষের পানি জমা সরাতে এই গাছ ব্যবহার করে থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য : অনেকের মল শক্ত হয়ে যায় এবং পায়খানা করতে অনেক কষ্ট হয়। যদি এই রকম হয়ে থাকে তাহলে লজ্জাবতী গাছের মূল ৭জ/৮ গ্রাম থেঁতো করে ভালো ভাবে সিদ্ধ করে ছেঁকে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

লজ্জবতী গাছের শিকড়ের উপকারিতা

লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের কি কি উপকার পাওয়া যায় তা নিম্নে দেওয়া হলো:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। অ্যান্টি-অক্সিডেন মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

জ্বর ও সর্দি কাশি নিরাময়: লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান থাকায় জ্বর ও সর্দি কাশি নিরাময় করতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : লজ্জাবতীর গাছের শিকড়ের রয়েছে অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ উপাদান। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

বিষক্রিয়া প্রতিরোধ: লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে রয়েছে অ্যান্টি-বিষ উপাদান। তাই বিষক্রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ত্বকের যত্ন : লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের রয়েছে অ্যান্টি- অ্যাক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এটি ত্বকের যত্নে নিতে সাহায্য করে।

হজমশক্তি বৃদ্ধিঃ  লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার।ফাইবার হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ : লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান। তাই কান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে রয়েছে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি : লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে রয়েছে অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট উপাদান। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।

হৃদ রোগের ঝুঁকি হ্রাস : লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এটি হৃদ রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে সাহায্য করে।

লজ্জাবতী গাছের গুনাগুন

লজ্জাবতী গাছকে ঔষধের রানী বলা হয়। লজ্জাবতী বর্ষজীবি গুল্ম,আগাছা বা ঔষধি জাতীয় গাছ। লজ্জাবতী অন্য আরেক নামে পরিচিত সেটা হলো লাজুক লতা। এর কান্ড লতানো এবং শাখা প্রসাশাখ ভরপুর। লজ্জাবতী গাছ কাটাযুক্ত ও লালচে রঙের হয়ে থাকে। এই গাছটি পাতা গুলো দেখতে অনেকটা তেতুল পাতার মত।

হাত বা পায়ের স্পর্শ পেলে লজ্জাবতী গাছের পাতা গুলো বন্ধ হয়ে যায়। পাতা গুলো সরু ও লম্বাটে, সংখ্যা ২ থেকে ২০ জোড়া হয়,এবং ফুল গুলে বেগুনি ও গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। আর ফল গুলো চ্যাপটা হয়। মে থেকে জুন মাসের ফুল আসে এবং জুলাই ও আগষ্ঠের মাসের দিকে ফুল থেকে ফল হয়। লজ্জাবতী গাছের ঔষধি গুনাগুন অনেক বেশি।

লজ্জাবতী গাছ দিয়ে নানা রোগের চিকিৎসা করা হর। হারবাল ঔষধ তৈরিতে এর ব্যাবহার যুগযুগ ধরে চলে আসছে। নাক,কান,দাঁত এবং ক্ষুদ্রনালী ঘা সারাতে লজ্জাবতী গাছের শিকড়,লতা পাতা ব্যবহার করে থাকে।জন্ডিস,অ্যাজমা,টিউমার,হুপিংকফ,চর্মরোগ, ডায়াবেটিস, হার্ট,লিভারের নানা রোগ সারাতে লজ্জাবতী গাছ ব্যবহার করে থাকে।

লজ্জাবতী গাছ গুটিয়ে যায় কেন

লজ্জাবতী গাছে অনেক কোষ রয়েছে, কোষ গুলোগুলো পানি ও খনিজ পদার্থে পরি পূর্ণ থাকে। রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে পাতার ফোলা কোষ থেকে লবণ সহ পানিও বের হে আসে।তাই পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে কোষ গুলো চুপসে যায়।চুপসানো ফলে কোষে পানি কম থাকে তাই লজ্জাবতী গাছের পাতা ও ডাল সোজা থাকতে পারেনা।
পাতা গুলো নিচের দিকে ঢলে পড়ে। স্পর্শ করার ফলে শুধু ঢলে পড়ে না,দুইটি পাতার মধ্যেবর্তী ফাঁকা স্থান ও জোড়া লেগে বন্ধ হয়ে যায়।লজ্জাবতী গাছের ছোট ছোট পাতা গুলো আলো পেলে খুলে যায় এবং আন্ধকারে বন্ধ হয়ে যায়

সাদা লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায়

সাদা লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায় হলো,গাছের পাতার উপর পানি ছিটালে পাতা গুলো সাদা হয়ে যায়।নিচে সাদা লজ্জাবতী গাছের ছবি দেওয়া হলো:

লজ্জাবতী ব্যবহার করা তিনটি সেরা উপায়

  • ক্ষত সারাতে লজ্জাবতীর প্রলেপঃ ক্ষত নিরাময় করতে এবং প্রদাহ কমাতে আমরা তাজা পেস্টটি পোল্টিস ব্যবহার করতে পারি। পোল্টিস তৈরি করতে একমুঠো তাজা লজ্জাবতীর পাতা নিন এবং সামান্য একটু পানি দিয়ে ভালো করে ঘুসে নিন। লজ্জাবতীর পাতাকে ঘুসা দিলে সহজে এটি পেস্টে পরিনিত হয়ে যায়। পেস্ট তৈরি করা হয়ে গেলে ক্ষত সারাতে এটিকে পোল্টিস হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
  • ডায়রিয়ার জন্য লজ্জাবতীর চাঃ ডায়রিয়া সারাতে আমরা লজ্জাবতীর চা খেতে পারি। চা বানাতে এক কাপ পানিতে একগুচ্ছ লজ্জাবতীর তাজা পাতা নিন। সেটাকে ভালো করে ফুটিয়ে নিন যতখন পানির রং পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত। পানির রং পরিবর্তন হয়ে গেলে সেটাকে ভালো করে ছেকে নিন,তার পরে খেয়ে নিন। এই চা রক্ত শর্করা মাত্রা ও কমাতে পারে,উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমাতে পারে এবং পেটের আলসারও কমাতে পারে।
  • লজ্জাবতীর তেলঃ যাদের পুরোনো ব্যাথা আছে তারা এই তেলটি ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাবে। তেল তৈরি করতে একটি প্যানে এক কাপ অপরিশোধিত তিলের তেল গরম করুন। এবার ১/৪ কাপ লজ্জাবতীর পাতা এবং মুদাকাথন কেরাই পাতা সমান পরিমান যোগ করুন। যতখন তেল ঝরঝর করা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত গরম করুন। ব্যস গরম করা হয়ে গেলে সমস্ত ব্যাথার জন্য এই তেলটি করতে পারবেন।

লজ্জাবতী গাছের চাষ পদ্ধতি

লজ্জাবতীর গাছ এটি একটি লতানো উদ্ভিদ। এটি দূরত্ব বর্ধনশীল উদ্ভিদ যা প্রায় সব ধরনে মাটিতে বৃদ্ধি পায়। লজ্জাবতীর চাষ করার জন্য আগে আমাদের ভালো মানসম্পন্ন বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এর বীজ সাধারণ বসন্তের বা গ্রীষ্মে বপন করতে হয়। এর বীজ বপনের সময় ১/২ ইঞ্চ মাটির নিচে এবং ২ ইঞ্চ করে দূরে লাগাতে হবে।

এই গাছকে সাধারণ রোগ বা পোকামাকড় দ্বারা প্রভাবিত হয়না। এটি বপনের ৬ মাস পরে ফুল ফোটে। এর ফুল সাধারণ ২ ধরনের দেখতে পাওয়া যা সাদা এবং গোলাপি। এই গাছ বাগানে এবং টবে চাষ করা হয়। লজ্জাবতী গাছ আরেটি নামে পরিচিত সেটা হলো লাজুল। এই গাছ গুলো আপনার বাড়ি সাজানো জন্য একটি সুন্দর আকর্ষণীয় উদ্ভিদ।

লেখকর মন্তব্যঃ লাল লজ্জাবতীর গাছের উপকারিতা

লাল লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা আজকে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করলাম। লাল লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা, লজ্জাবতীর গাছের শিকড়ের উপকারিতা, লজ্জাবতী গাছের গুনাগুন,লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায়, লজ্জাবতী গাছের চাষ পদ্ধতি এই সব গুলো বিষয় আজকের আর্টিকেল বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করি আপনি সম্পুর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার পরে আপনি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই রকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকুন। আর আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু বান্ধ বা আত্মায় সজনকে শেয়ার করে দিবেন।ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্মার্ট এনবি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url