জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতার সম্পর্কে বিস্তারিত

জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে কি আপনি? তাহলে আজকের আর্টিকেল আপনার জন্য। আজকে আমরা জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতার সম্পর্কে বলব। জাম হলো একটি মৌসুমি ফলের মধ্যে অন্যতম ফল। জাম খেতে ভালোবাসে না,এমন মানুষ কমই আছে। 
এটি গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও জুন,জুলাই ও আগস্ট মাসের দিকে পাওয়া যায়। জামের বিচি, গাছের ও পাতার অনেক উপকারি ও ঔষধি মুল্য আছে। এই জামের বিচির আমাদের জীবনের কতটা উপকারি সেটা জানলে আপনি অবাক হবেন। চলুন আমরা জেনেনি জামের বিচির,গাছের ছাল ও পাতার কি কি উপকার পাওয়া যায় এবং কি কি ক্ষতি হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।

পোস্ট সূচিপত্রঃ জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা

জামের বিচির উপকারিতা

জাম হচ্ছে একটি মৌসুমি ফল। জাম ফল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের নানা উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু জাম খাওয়া পরে আমরা বিচি ফেলেদি। জামের বিচি আমাদের জন্য কতটা উপকার তা আমরা জানিনা। চলুন জেনেনি জামের বিচির খেলে আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকার পাওয়া যায় তা নিচে দেওয়া হলোঃ
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করেঃ জামের বিচি খেলে আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সেটা গুঁড়ো করে খেতে হবে। জামের বিচি খেলে সেটাকে ভালো করে গুড়াঁ করে নিতে হবে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ জামের বিচির গুঁড়া মিশিয়ে খাবেন। এই ভাবে কয়েকদিন খেলে দেখবেন সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে। এই পানীয় ইনসুলিনের কার্যকরীতা বাড়ায়। যে কারনে রক্তের সুগারের মাত্র নিম্নমুখী হয়।
  • পেট ভালো রাখেঃ দেখা যায় আমাদের পেটে অনেক ধরনে সমস্যা দেখা দেয়,যেমন: গ্যাস,অ্যাসিডিটি,বদহজম এই রকম নানান সমস্যা হয় আমাদের পেটে। পেটের এই সমস্যা দূর করতে নিয়মিত ঔষধ পান করে অনেকই। কিন্তু সে সব ঔষধ নিয়মিত পান করার ফলে লিভার ও কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের কে ঘরোয়া সমাধান বেছে নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে জামের বিচি। জামের বিচির খাওয়ার ফলে এই অসুখ থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন। প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ জামের বিচির গড়াঁ মিশিয়ে খাবেন। সকালে খালি পেটে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
  • উচ্চ রক্তচাপ দূরে রাখেঃ উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাচতে হলে আমাদের কে খাবারে ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কিডনি, হার্ট ও চোখ সহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে জামের বিচি। এই বিচির গুড়াঁ পানিতে মিশিয়ে পান করলে তা উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে। এই বিচির গুড়াঁ খাওয়ার ফলে হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকরী হলো তা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ অসুখ থেকে শরীরকে দূরে রাখে। ব্যাকটেরিয়া,ভাইরাস ও ফাঙ্গাসের মত জীবানু তখন আর আক্রমণ করতে পারেনা। তাই আমাদের শরীর কে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। নিয়মিত জামের বিচি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে জামের বিচির গুড়াঁ পানিতে মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।

জামের বিচির পাউডার

আপনি হয়তো জামের বিচির পাউডার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে? চলুন তাহলে আজকের আর্টিকেল আপনার জন্য। আজকে আমরা জামের বিচির পাউডার সম্পর্কে আলোচনা করবো। জাম হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন অত্যান্ত উপকারী ফল। শুধু জাম নয়,জামের পাতা,জামের ছাল এবং জামের বিচি সবগুলোই উপকারী।

বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা জাম এবং জামের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে থাকে।এতে প্রচুর পরিমাণে ওষুধি গুণ রয়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জামের বিচি অত্যন্ত ভালো একটি ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তাহলে চলুন জেনে নিই জামের বিচির পাউডার গুঁড়ো করে রাখতে হয়।জামগুলোকে সুন্দর করে ধুয়ে বিচি ছাড়িয়ে একটি পরিষ্কার পাত্রে রাখুন।
  • বিচিগুলোকে এমন ভাবে পরিষ্কার করতে হবে যাতে বিচির গায়ে কোন প্রকার আশঁ না থাকে।
  • এরপর জামের বিচি গুলোকে ভেঙ্গে ভিতরের সবুজ অংশটাকে কিছুদিন রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • এবার এই শুকনো বিচি গুলোকে ভালো করে গুড়ো করে নিতে হবে।
  • এবার এই গুড়ো করা বিচিগুলোকে ভালো করে চালুনি দিয়ে চেলে নিতে হবে।
  • এরপর জাম বিচির গুড়ো গুলো বায়ুরোধক পরিস্কার একটা বয়োমে রেখে দিতে হবে।
  • প্রতিদিন সকালে পানিতে এক চা চামচ বিচির পাউডার নিয়ে মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে।

জামের উপকারিতা

জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। জামে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ও মিনারেল যা আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। জামে এমন একটি ফলকে মানুষ সবাই চিনে এবং খেয়ে থাকে। এই ফলটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এই ফলটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে কালোজাম নামে পরিচিত। এটি গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও জুন, জুলাই এবং আগস্ট মাসের দিকে পাওয়া যায়।
এই ফলটি অনেক একটি পুষ্টিকর ফল। অবশ্যই আপনারা এই ফলটি খাবেন, কেননা এ ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন রয়েছে যা আপনাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। এছাড়াও জাম শরীরে রোগ প্রতিরো ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি কাশি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

এ ফল খাওয়ার ফলে মুখের স্কিন উজ্জ্বলতা করে এবং ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগকে প্রতিরোধ করতে কার্যকারিতা রয়েছে জামে। তাই প্রতিদিন যদি নিয়ম করে এক মুঠো করে জাম খায় তাহলে ভিটামিন,মিনারেল এবং শর্করা এই গুলো আমাদের শরীরের ঘাটতি পূরন করবে।

একমুঠো জামে যে পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ
  • ১৫ মিলিগ্রাম শর্করা রয়েছে
  • প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে
  • ৭৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে
  • ১৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে
  • এবং পর্যাপ্ত পরিমান ফসফরাস রয়েছে

জাম গাছের ছালের উপকারিতা

জাম এবং জামের বিচি যেমন অনেক উপকার রয়েছে, তেমনি জাম গাছের ছালেরও অনেক ঔষুধি গুনাগুন রয়েছে। তাই নিচে জাম গাছের ছালের উপকারিতা আলোচনা করা হলোঃ

  • মানুষের শরীরে কোথাও যদি ক্ষত হয় এবং সে ক্ষত যদি তাড়াতাড়ি না শুকায়, তাহলে জাম গাছের ছাল যদি মিসসিন করে বেটে ক্ষত স্থান লাগিয়ে দেওয়া যায়। তাহলে তাড়াতাড়ি ক্ষত স্থান শুকিয়ে যাবে।
  • পায়খানা করার সময় যদি কারো রক্ত বেড় হয় তাহলে জাম গাছের ছাল রস করে ১-২ চামচ রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে। দেখা যাবে পায়খানার সাথে আর রক্ত বেড় হবে না।
  • দেখা যায় অনেক বাচ্চার পেটে সমস্যা আছে। পেটের সমস্যার জন্য বাচ্চার শরীর ভালো থাকে না। এমতো অবস্থায় যদি তাদের জন্য ৫ থেকে ৬ গ্রেণ মাত্রা জাম গাছের ছাল রস করে ৫ থেকে ১০ ফোটা, গাওয়া ঘি এবং অল্প পরিমান চিনি মিশিয়ে খাওয়ালে দেখবেন বাচ্চার শরীর ভালো হয়েগেছে।
  • দেখা যায় অনেক জনের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হয়। তারা যদি জাম গাছের ছাল গুঁড়া করে দাঁত মাজে তাহলে উপকার পাবে। কিন্তু এতে ছোপ পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। যদি ২-১ দিন পর পর দাঁত মাজে তাহলে কোন সমস্যা হবে না।

জামের অপকারিতা

অনেকেই হয়তো জামের অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে? জাম হলো একটি মৌসুমি গ্রীষ্মকালীন ফল এবং এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুনা রয়েছে। জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি১,ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩,ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও জামে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়া বৈশিষ্ট্য যে কোন সংক্রামণ কে শরীরের ভিতরে এবং বাহিরে থেকে আক্রমণ করতে বাঁধা দেয়। এছাড়াও ক্যান্সার এর মত মারাত্মক রোগ থেকেও আমাদের মুক্তি পেতে সাহায্য করে। জাম দাঁতের গোড়া মজবুত করতেও সাহায্য করে।আপনাদের অনেকের হয়তো

ধারণা হয়েছে এর অপকারিতার কতটুকু রয়েছে। কিন্তু জাম ফলে অনেক গুলো পুষ্টিকার গুনা রয়েছে এর কোন অপকারিতা নাই বললে চলে। আশা করছি আপনি জাম ফলের অপকারিতার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা

জাম হচ্ছে একটি জনপ্রিয় ফল যার মধ্যে অনেক স্বাস্থ্যকর উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু আপনি কি গর্ভাবস্থায় জাম খেতে চাচ্ছেন? গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া নিরাপদ কি না সেটা নিয়ে ভাবছেন? চলুন জেনেনি আসলেই গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া নিরাপদ কি না। হ্যাঁ,গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া নিরাপদ। আপনি যদি গর্ভাবস্থায় জাম সেবন করেন তাহলে আপনার কোন ধরনের ক্ষতি হবে না।

গর্ভাবস্থায় জাম সেবন করলে আপনার বেবির জন্য খুবই ভালো ফলাফল দেয় এবং ক্যালরি খুবই কম। যদিও আপনি গর্ভাবস্থায় সব পছন্দের থাকা খাবারগুলো সবি খেতে পারবে না। কিন্তু গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া নিরাপদ। কারণ জামে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টিকর রয়েছ,যা ব্রণের সমস্যা এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার জাম।

আপনি যদি গর্ভাবস্থায় জাম সেবন করেন তবে আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমবে। কারণ জামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা গর্ভাবস্থায় আপনার শক্তি যোগাবে। ১০০টি জামে রয়েছে ৫০০মিলিগ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় সেবন করলে বাচ্চার উন্নতি ঘটবে এবং আপনাকে উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।

জাম পাতার উপকারিতা

জামে,বিচিতে ও ছালে যেমন উপকার রয়েছে তেমনি জাম গাছের পাতারোও ঔষুধি গুনাগুন রয়েছে। চলুন জেনেনি জাম পাতার ঔষুধি গুনাগুন সম্পর্কে।
  • আলসার রোগ নিরাময়ঃ জাম পাতার অনেক ঔষুধি গুনাগুনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই জামপাতা খেলে আলসার ভালো হয়।
  • মুখের আলচার নিরাময়ঃ জাম পাতা ব্যবহার করার ফলে মুখের আলচার নিরাময় করে।
  • জ্বর নিরাময়ঃ জ্বর হলে জাম পাতা ব্যবহার এর মাধ্যমে জ্বর নিরাময় করা সম্ভব।
  • হজমের জন্য সহায়তা করেঃ জাম পাতার ব্যবহার এর ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। পাকস্থলীর অঙ্গাণুগুলো শক্তিশালী হয়।গ্যাস্টিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে না।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ জাম পাতার ব্যবহার এর ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। জাম পাতায় গ্লাইসোমিক ইনডেক্স কম থাকে যার ফলে জাম পাতার ব্যবহারে শর্করা বৃদ্ধি হয়না্। এছাড়াও ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়।
  • পেটের রোগ নিরাময়ঃ জাম পাতায় ভিটামিন ও মিনারেলস বিদ্যামান এছাড়াও এন্ট্রি ব্যাকটেরিয়া উপাদান রয়েছে। যার ফলে পেটের যে কোন সমস্যা দূর করে।

লেখকের মন্তব্যঃ জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতার

আজকে আমরা জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতার সম্পর্কে আলোচনা করলাম। জাম হলো গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফল। তাই আমরা জামের উপকারিতা, জামের বিচির পাউডার, জামের বিচির উপকারিতা, জামের অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া উপকারিতা, জাম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করি আকের আর্টিকেল আপনি জাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই পোস্টটি যদি পড়ে আপনাকে ভালো লাগে তাহলে আপনার পরিচিত বন্ধু -বান্ধব ও আত্মীয় সজনের পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ রইলো। এতো খন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্মার্ট এনবি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url